পারুলিয়ার গরুরহাটে কঠোর নিরাপত্তা; জনমনে স্বস্থি
জেলার অন্যতম এবং দেবহাটা উপজেলার বৃহৎ পশুর কেনা-বেচার হাট পারুলিয়ার গরুহাট। আগামী শনিবার ১০ জিলহাজ্ব আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেবহাটায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুরহাট। সপ্তাহের রবিবার এখানে হাট বসে। রবিবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর ব্যাপক সমাগম ঘটে। কিন্তু দিনটির শুরুতে সকাল থেকে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি আকারে বৃষ্টিতে হাটের পরিবেশ কিছুটা ব্যাহত হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ এবং দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেনের দক্ষ নের্তৃত্বে ব্যাপক নিরাপত্তা ও সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে পশু বেচাকেনা সেদিনের মতো সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সরকার ধায্যকৃত মূল্য না পাওয়ায় সরকারিভাবে উক্ত হাট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে, ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শানার্থীরা এ বছর হাটের খাজনার পরিমাণ কম থাকায় এবং পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় ধন্যবাদ প্রকাশের পাশাপাশি স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছে। তাছাড়া সকাল থেকে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ, দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন, ওসি(তদন্ত) শরিফুল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার উজ্বল দত্ত, এসআই, এএসআই, পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে, যানজট নিরশন করে হাটের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করেন।
এদিকে, জেলা ও জেলার বাইরে থেকে পশু ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের কিছুটা গতি পিছিয়ে দেয় বৃষ্টির কারণে। এবার ঈদের শেষ হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা থাকলেও দাম কম ছিল না বড় গরুর। এবার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে তাতে সন্তুষ্ট খামার, গরু ব্যবসায়ীরা ও ক্রেতারা। যথেষ্ট মূল্য পাওয়াতে লোকসান গুনতে হচ্ছে না তাদেরকে। অন্যদিকে ক্রেতাদের সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ধর্মীয় কাজটি সমাধা করতে পশু কিনছে মানুষ। তাই বিক্রিতেও রয়েছে প্রতিযোগীতা। তবে এবার হাটে ভারতীয় পশু না থাকায় দেশীয় পশুর আগমন কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় স্বস্থি পাচ্ছেন বিক্রেতারা।
পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এ ঈদের দিনটিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় মানুষ কোরবানি দিয়ে থাকেন। এজন্য প্রয়োজন হৃষ্টপুষ্ট পশু। দেশে প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতি বছর কোরবানি দিয়ে থাকেন। এ চাহিদাকে সামনে রেখে সারাদেশে অসংখ্য পশুর হাট বসে থাকে। তেমনি রবিবার দেবহাটা উপজেলার গরুহাটে গিয়ে দেখা গেছে হাটের হাল চিত্র। গরুর পাশাপাশি পশুর মধ্যে মহিষ ও ছাগল। তবে এর সাথে ভেড়াও যোগ হয়েছে। হাটে বেচাকেনাও অনেকটা জমে উঠেছে। এর মধ্যে দেশী গরুর সংখ্যাই বেশি।
গরুর বেপারিরা জানান, জেলার অন্য পশুরহাটগুলোতে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশী পশু আসছে। তবে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে গরু কম আসায় দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে বলে সাধারণের অভিমত। বিশেষ করে গত বছর বাজারে মাংসের কেজি ছিল ৩৫০টাকা থেকে ৪০০টাকা। সেখানে এ বছর মাংসের কেজি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০টাকা। সে হিসেবে পশুর দাম গত বছরের তুলনায় কম। হাটে ছাগলের আগমনও যথেষ্ট। আছে ভারতের রাজস্থান থেকে আনার পর বাড়িতে পালিত মহিষ। এ হাটে গত কয়েকহাটের তুলনায় বিক্রিও বেশি। হাটে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম চাইছে বিক্রেতারা। তবে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকার গরু ও ২০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা দামের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। ৫৫-৬৫ হাজার টাকার মধ্যেও বেশকিছু গরু বিক্রি হয়েছে। দাম ৪ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে ৬/৮ হাজার টাকা দামের ছাগল বেশি বিক্রি হচ্ছে।
পারুলিয়া গড়িয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় গরু বিক্রয় করেছেন। আশাশুনি উপজেলার শোভনালি গ্রামের পরিতোষ কুমার জানায়, তার চাহিদা ছিল এক লাখ ২৪ হাজার কিন্তু তিনি ১ লাখ ২৩ হাজার টাকায় গরু বিক্রয় করেছেন।
অপরদিকে, পারুলিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা চাহিদা থাকলেও ক্রেতাদের দাম ছিল ১লাখ ১০হাজার। অপরদিকে, গরুর দাম তুলনামূলক ভালো হলেও ছাগলের দাম তেমন বেশি সন্তোষজনক হয়নি। সখিপুরের কোঁড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছাগলের দাম ৩০ হাজার টাকা চাইলেও ক্রেতারা দাম দিতে চাইছিল ২৫/২৮ হাজার টাকা। নওয়াপাড়ার হাদিপুর গ্রামের ইউসুফ আলী তার ছাগলের দাম ৩৬ হাজার টাকা চাইলেও ক্রেতারা ২৮ হাজারের উপরে দিতে নারাজ, নলতা গ্রামের শম্ভুনাথ ২০হাজার টাকা চাইলে ক্রেতারা ১৫ হাজার টাকা টাকার উপরে দিতে রাজি হয়নি।
কিন্তু হাটে যে দাম উঠছে তাতে খরচ উঠানোর পর অনেকটা স্বস্থি ফিরেছে তাদের। আবার অনেকে পশু বিক্রয় করতে না পেরে বাকি দিনগুলোতে কোনো রকম খরচ উঠলেই পরিমানমতো দামে বিক্রি করে দিবেন বলে জানান। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধাস্ত অনুযায়ী আগামি বৃহস্পতিবার আরো একবার হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। হাটে শুল্ক আদায়কারী উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার বাবলুর রহমান জানান, ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর সমাগম বেশি। তাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমকার মধ্যে দাম থাকায় স্বস্থি ফিরেছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ